ঢাকা,  বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ,

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণ, ৬ শিক্ষার্থীর স

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণ, ৬ শিক্ষার্থীর স

স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার চার আসামি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে তিন জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি তিন জনের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সনদ স্থগিত করা হয়।

রবিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেইসঙ্গে ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সভা শেষে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিন্ডিকেটের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নূরুল আলম। এর আগে বিকাল সাড়ে ৩টায় উপাচার্যের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 


সনদ স্থগিত হওয়া শিক্ষার্থীরা হলো—আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান, একই বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. মুরাদ হোসেন, একই ব্যাচের মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী, ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. হাসানুজ্জামান, ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহ পরান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সাব্বির হাসান সাগর। 


এর মধ্যে ধর্ষণে অভিযুক্ত সাবেক শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের সনদ স্থগিত এবং ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। মোস্তাফিজুরকে পালাতে সহায়তাকারী হাসানুজ্জামান ও শাহ পরানের সনদও স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ভুক্তভোগী নারীর স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রাখায় সহায়তাকারী মুরাদ হোসেন, মোস্তাফিজুরকে পালাতে সহায়তাকারী মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী এবং সাব্বির হাসানের সনদ স্থগিতের পাশাপাশি সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। 

মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, শাহ পরান সহসভাপতি, মুরাদ হোসেন সহ-সম্পাদক এবং সাব্বির হাসান কার্যকরী সদস্য। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী। সবাই মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকতো।

উপাচার্য মো. নূরুল আলম বলেন, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ও হল-সংলগ্ন এলাকায় বহিরাগত দম্পতির সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টরিয়াল বডি প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত ও বহিষ্কার করেছি আমরা। ক্যাম্পাস বহিরাগতদের প্রবেশ ও অস্থায়ী দোকানপাট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনুমোদনহীন অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাদের ছাত্রত্ব নেই, আবাসিক হল থেকে বের হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হবে। তারা বের না হলে বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গঠিত কমিটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো। কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’

এদিকে, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতাসহ চার জনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার বিকালে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগম এ আদেশ দেন। রিমান্ডে নেওয়া আসামিরা হলো মোস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির হাসান সাগর, মোস্তফা সিদ্দিকী ও হাসানুজ্জামান। 

ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, তাদের বাড়ি আশুলিয়ার জিরানী এলাকায়। তাদের বাসায় ভাড়া থাকতো অভিযুক্ত মামুনুর রশীদ। মোস্তাফিজের সঙ্গে তার পূর্বপরিচয় ছিল। মাঝেমধ্যে মীর মশাররফ হোসেন হলে মোস্তাফিজের কাছে থাকতো মামুন। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে নিয়ে এসে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসে মামুনুর রশীদ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখে মামলার আসামিরা। এরপর তার স্ত্রীকে দিয়ে নিজের রেখে আসা জিনিসপত্র আনতে বলে মামুন। মামুনের জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ওই নারী। জিনিসপত্র নিয়ে মামুন হলের ওই কক্ষে রেখে আসে। এরপর তার স্বামী অন্যদিক থেকে আসবে বলে ওই নারীকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। ওই দিন রাতেই আশুলিয়া থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর স্বামী। পরে অভিযান চালিয়ে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি দুজন পলাতক রয়েছে।