ছবি: সংগৃহীত
তৃতীয় ওয়ানডের সংক্ষিপ্ত স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩০.১ ওভারে ১১৭/১০ ( পিয়েরে ০*; আথানেজ ১৫, অগস্ট ০, কিং ১৮, হোপ ৪, রাদারফোর্ড ১২, চেজ ০, কার্টি ১৫, মোটি ৭, গ্রিভস ১৫, আকিল ২৭)
ফল: বাংলাদেশ ১৭৯ রানে জয়ী
৯১ রানে ম্যাচসেরা সৌম্য সরকার, ১২ উইকেট ও ৬৮ রানে সিরিজসেরা রিশাদ।
বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ২৯৬/৮ ( সোহান ১৬*, সাইফ ৮০, সৌম্য ৯১, হৃদয় ২৮, শান্ত ৪৪, অঙ্কন ৬, রিশাদ ৩, নাসুম ১, মিরাজ ১৭)
তৃতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৭৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক দল। ২৯৭ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়ে ক্যারিবিয়ানদের ১১৭ রানে অলআউট করেছে তারা।
বাংলাদেশ ওপেনিং জুটিতেই ব্যাট হাতে যা দাপট দেখিয়েছে। ১৫১ বলে তারা তুলেছে ১৭৬ রান। কিন্তু মিরপুরের কালো পিচে তার পর ব্যাটিং যে কঠিন হয়ে দাঁড়ায় তার প্রমাণ এই তথ্যে-৩৩০ বলে ২৩৭ রানের বিনিময়ে পড়েছে ১৮ উইকেট।
৩৫ রানে নাসুমের আঘাতে টপের তিন উইকেটের পতনে খেই হারায় ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস। তার পর নিয়মিত বিরতিতে বাংলাদেশের স্পিনে ব্যাটাররা আসা যাওয়া করেছেন। মাঝে রিশাদের এক ওভারেই পড়েছে দুটি উইকেট। সর্বোচ্চ ইনিংস বলতে শেষ দিকে আকিল হোসেনের ১৫ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ২৭ রান। তার আউটেই ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস থামে ৩০.১ ওভারে ১১৭ রানে।
বাংলাদেশের স্পিনেই পুরোপুরি কাবু হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নাসুম আহমেদ ৬ ওভারে ১১ রানে নেন ৩ উইকেট। ৫৪ রানে তিনটি নেন রিশাদ হোসেনও। ১৬ রানে দুটি নেন তানভীর ইসলাম। ৩৫ রানে মেহেদী হাসান মিরাজও নেন দুটি।
মিরাজের বলে পড়লো নবম উইকেট
জাস্টিন গ্রিভসও প্রান্ত আগলে খেলার চেষ্টা করছিলেন। ২৮.৪ ওভারে তাকে থামিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। গ্রিভস ৩৩ বলে ১৫ রানে ফিরেছেন। তাকে সোহানের গ্লাভসবন্দি করান বাংলাদেশ অধিনায়ক। ওয়েস্ট ইন্ডিজ নবম উইকেট হারায় ৯৭ রানে।
রিশাদের তৃতীয় শিকার মোটি, ৮ উইকেট নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের
২৫.১ ওভারে রিশাদকে চার মেরেছিলেন মোটি। রান বাড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন তিনি। কিন্তু বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি। একই ওভারের তৃতীয় বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে আউট হন তিনি। মোটি ১২ বলে ১ চারে ৭ রানে ফিরেছেন।
তানভীরের দ্বিতীয় শিকার কার্টি, ৭ উইকেট নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের
প্রান্ত আগলে খেলার চেষ্টায় ছিলেন কেসি কার্টি। কিন্তু উইকেট পতনের মিছিলে তার প্রতিরোধ স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। দলের ৬৭ রানে তাকে শান্তর ক্যাচ বানান তানভীর। কার্টি ৪৩ বলে ১৫ রানে আউট হয়েছেন।
রিশাদের জোড়া আঘাতে ৬ উইকেট নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের
তানভীরের আঘাতের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মহা বিপদে ফেলেন রিশোদ হোসেন। ১৮.১ ওভারে এসেই শেরফানে রাদারফোর্ডকে (১২) মেহেদী হাসানের ক্যাচ বানান তিনি। একই ওভারের চতুর্থ বলে তার জোড়া শিকার হন রোস্টন চেজও (০)। তাতে ৬৩ রানের মধ্যেই ৬ উইকেট হারিয়ে পুরোপুরি বিপর্যয়ে পড়ে সফরকারী দল।
হোপকে ফেরালেন তানভীর
শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিপদে ফেলেন নাসুম আহমেদ। তার তিন উইকেট শিকারের পর খেই হারায় ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস। অধিনায়ক শাই হোপও কিছুই করতে পারেননি। ১৪তম ওভারের প্রথম বলেই তাকে বিদায় দেন তানভীর ইসলাম। হোপ ক্যাচ আউট হন ৪ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ চতুর্থ উইকেট হারায় ৪৬ রানে।
নাসুমের আঘাতে বিপদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
এক নাসুম আহমেদের ঘূর্ণিতে শুরুতেই বিপদে পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুর তিনটি উইকেট নিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ ৮.২ ওভারে ওপেনার ব্র্যান্ডন কিংকে বোল্ড করেছেন। ক্যারিবিয়ান ব্যাটার ১৭ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৮ রানে ফিরেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তৃতীয় উইকেট হারায় ৩৫ রানে।
নাসুমের দ্বিতীয় শিকার অগাস্ট
এক ওভার পর আবার আঘাত হানেন নাসুম। এবার তার শিকার জন নতুন ব্যাটার আকিম অগাস্ট। তিনি এলবিডাব্লিউতে ফিরেছেন ০ রানে। শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি। তারপর রিভিউ নেওয়াতে মেলে সাফল্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় উইকেট হারায় ২৮ রানে।
পঞ্চম ওভারে নাসুমের আঘাত
২৯৭ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়ে পঞ্চম ওভারেই আঘাত হেনেছে বাংলাদেশ। নাসুমের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে ফিরেছেন ওপেনার আলিক আথানেজ। ক্যারিবিয়ান ব্যাটার ২১ বলে ১৫ রান করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম উইকেট হারায় ১৬ রানে।
শেষ বলে আউট মিরাজ, বাংলাদেশ থামলো ২৯৬ রানে
সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৯৭ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
টস জিতে মিরপুরে সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসানের আক্রমণাত্মক ওপেনিং জুটিতে ভর করেই বড় স্কোরবোর্ড পেয়েছে বাংলাদেশ। শুরুর জুটিতে ১৭৬ রান যোগ করেন তারা। সাইফের ক্যারিয়ারসেরা ৮০ রানের পর ৯১ রানে আউট হন সৌম্য। তার পর পঞ্চশ রানের জুটি গড়েন হৃদয় ও শান্ত। এই জুটি ভাঙার পর ১৫ ডেলিভারির ব্যবধানে দ্রুত ৪টি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। যার ফলে ঘটে ছন্দপতন। তখন স্কোর তিনশর কাছে যাওয়াই শঙ্কায় পড়ে যায়। তার পরেও নুরুল হাসান সোহানের ৮ বলে ১টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৬ রানের ক্যামিও ও মিরাজের ১৭ বলে ১৭ রানে ২৯৬ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। ২৪ বলে ৩৫ রান যোগ করেন তারা। মিরাজ অবশ্য শেষ বলে আউট হন।
৪১ রানে ৪ উইকেট নেন আকিল হোসেন। ৩৭ রানে দুটি নেন আলিক আথানেজ। একটি করে নেন রোস্টন চেজ ও গুডাকেশ মোটি।
এক ওভারে আকিল নিলেন ৩ উইকেট, ৭ উইকেট হারালো বাংলাদেশ
শান্তর বিদায়ের পর রান বাড়িয়ে নেওয়ার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় সফল হতে পারেনি। উল্টো ৪৬তম ওভারে আকিল হোসেনের বলে আরও তিনটি উইকেট হারিয়েছে। ফিরেছেন অঙ্কন, রিশাদ ও নাসুম। তাতে ২৬১ রানে বাংলাদেশ হারায় ৭ উইকেট।
৪৪ রানে ফিরলেন শান্ত
হৃদয় ফিরলে রানের গতি বাড়াতে ভূমিকা রাখছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এই সময় বেশ কয়েকবার ক্যাচও তুলেছিলেন তিনি। ৪৪তম ওভারে বড় শট খেলতে গিয়ে ৪৪ রানে ক্যাচ আউট হন শান্ত। তার ৫৫ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি ছক্কা। বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায় ২৫২ রানে।
২৮ রানে আউট হৃদয়
১৮১ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর ফিফটি রানের জুটি গড়েন তাওহীদ হৃদয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে পারছিলেন না। গতি বাড়াতে গিয়েই কাটা পড়েন তাওহীদ হৃদয়। ৩৯.৫ ওভারে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন তিনি। তাতে ৪৪ বলে ২৮ রানে ফিরেছেন হৃদয়। তার ইনিংসে ছিল ২টি চার। বাংলাদেশ তৃতীয় উইকেট হারায় ২৩১ রানে।
৯১ রানে থামলেন সৌম্য
সাইফের আউটের পর সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সৌম্য। তখন তিনি ৯১ রানে ব্যাট করছিলেন। ২৮.২ ওভারে তাকে বড় শট খেলতে প্রলুব্ধ করেন আকিল হোসেন। কিন্তু ব্যাটে ঠিকমতো সংযোগ ঘটাতে পারেননি। ডিপ মিডউইকেটে তার ক্যাচ নেন অগাস্ট। ৯ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন সৌম্য। তার ৮৬ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও ৪টি ছয়। বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারায় ১৮১ রানে।
সাইফের আউটে ভাঙলো ১৭৬ রানের জুটি
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুর জুটিতেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। সাইফ-সৌম্যর ফিফটিতে মিরপুর স্টেডিয়ামে দশ বছরে উদ্বোধনী জুটিতে দেখা পেয়েছে সর্বোচ্চ রানের। ১৭৬ রানের এই জুটি ভেঙেছে সাইফ হাসানের বিদায়ে। ২৫.২ ওভারে চেজকে মেরে খেলতে গিয়ে ৮০ রানে কাটা পড়েন সাইফ। তার ৭২ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ৬টি ছয়। ওয়ানডেতে এটি সাইফের সেরা ইনিংস।
সৌম্য-সাইফের এই ওপেনিং জুটি আবার ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আগের সেরাটি লিটন-তামিমের ২৯২।
সৌম্য-সাইফের ফিফটিতে দেড়শ ছাড়ালো বাংলাদেশের
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দুর্দান্ত সূচনা পেয়েছে বাংলাদেশ। ১০ বছরে মিরপুরে পেয়েছে সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটির দেখা। ১৬ ওভারে তুলে ফেলে ১০৯ রান। সৌম্য তো ক্যারিয়ারের ১৪তম ফিফটি তুলে নিয়েছেন। তিনি ফিফটির দেখা পান ৪৮ বলে। ১৬তম ওভারে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির দেখা পান সাইফ হাসানও। তিনি ফিফটি পান ৪৪ বলে।
নবম ওভারে অবশ্য রিভিউ নিয়ে বেঁচেছেন সাইফ হাসান। খ্যারিয়ে পিয়েরের বলে এলবিডাব্লিউতে আঙুল তুলেছিলেন আম্পায়ার। পরে দেখা গেছে ব্যাটে এজ হয়ে প্যাডে লেগেছে বল।
অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
মিরপুরে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডেতেও টস জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবারও শুরুতে ব্যাটিং নিয়েছে তারা।
রিশাদ হোসেনের ঘূর্ণিতে প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য সুপার ওভারে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাতে সিরিজি এখন ১-১ সমতায়।
একাদশে কারা
দুই দলই আজ অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে নেমেছে।
বাংলাদেশ একাদশ: সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক), রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ, তানভীর ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: ব্র্যান্ডন কিং, আলিক আথানেজ, কেসি কার্টি, শাই হোপ (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), শেরফানে রাদারফোর্ড, , জাস্টিন গ্রিভস, রোস্টন চেজ, আকিম অগাস্ট, গুডাকেশ মোটি, খ্যারি পিয়েরে ও আকিল হোসেন।























