ঢাকা,  বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ,

‘ভিসানীতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপের শামিল’

‘ভিসানীতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপের শামিল’

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও দৈনিক অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিবাদ রাজনীতিবিদরা করবেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত যখন বললেন গণমাধ্যমও ভিসানীতির মধ্যে আসবে। এ জন্যই আজ মাঠে নেমেছি। পিটার হাসের বক্তব্য গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতা আছে, তাতে অযাচিত হস্তক্ষেপের শামিল।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে জাস্টিস ফর জার্নালিস্টস অয়োজিত ভিসানীতির নামে সংবাদমাধ্যমে মার্কিন চাপের প্রতিবাদে সাংবাদিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ চলে সংবিধানের ওপর। তবে রাজনীতির প্রয়োজনে রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন হয়। আজকেও রাজনীতিবিদরা বলেছেন দেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। তবে একটি স্বাধীন দেশের ওপর বাইরের দেশের হস্তক্ষেপ মানি না, মানবো না। যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুর আচরণের বিপরীতে প্রভুর আচরণ করতে চায়। আমরা সেটি মানবো না। তারা ভিসানীতির ভয় দেখিয়ে অযাচিত হুমকি দেবেন, সেটা মেনে নিতে পারি না।


তিনি বলেন, আমরা কি এ দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র হতে দেবো না, আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু হোক তা কি হতে দেবো না, আমাদের গণমাধ্যম স্বাধীন হোক তা কী হতে দেবো না? আমরা শুধু এই কথাটিই বলতে চাই আমরা যে কাজগুলো করতে চাই, সেটি আমরা নিজেরাই করতে চাই। আমাদের নিজের শক্তি দিয়ে, স্বাধীনচেতা বিবেক নিয়ে আমরা সেটি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কারও হুমকি, ধমক ও চাপের মুখে আমরা করতে চাই না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমাদের আবেদন, এই দেশটি আমাদের এখানে বিদেশি কোনও শক্তি এসে কাউকে ক্ষমতা থেকে চুত্য করতে পারবে না, কাউকে ক্ষমতায় বসাতেও পারবে না। তাই রাজনীতিতে যারা আছেন, রাজনীতির খেলার মাঠে যারা খেলছেন, তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য সব রাজনৈতিক দল প্রয়োজনে তাদের আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে তারা সমঝোতায় পৌঁছাবেন, এটি এই দেশের মানুষের প্রত্যাশা। আমাদের গণমাধ্যমের প্রত্যাশাও এটি। 


ইকবাল সোবহান বলেন, গণমাধ্যম কারও পক্ষেও নয়, কারও বিপক্ষেও নয়। গণমাধ্যমবিরোধী দলের পক্ষেও নয় বিরোধী দলের বিরুদ্ধেও নয়। গণমাধ্যম সত্যের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে, দেশের অগ্রযাত্রার পক্ষে। আমরা অতীতে এটিই প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। সামরিক সরকার এসেছে আমাদের ওেপর চাপ দিয়েছে, স্বৈরাচার সরকার এসেছে আমাদের ওপর চাপ দিয়েছে। আমাদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের গণমাধ্যমের যারা সাংবাদিক, সম্পাদক, আমাদের যারা কর্মী, তারা বুকের রক্ত দিয়েও এই চক্ষু রাঙানোকে উপেক্ষা করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পতাকাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। 

পাশাপাশি কোনও বিদেশি শক্তি, সে পরাশক্তিই হোক আর যত বড় শক্তি হোক, তারাও যদি আমাদের ওপর তাদের চোখ রাঙানি দিয়ে এ দেশে অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে চায়, আমাদের বুকের রক্ত দিয়ে হলেও তার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিরোধ করবো।

বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত গণমাধ্যমের দেশ। সেখানেও সাংবাদিক নির্যাতন হয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্য তার দেশেরই মুক্ত গণমাধ্যমের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পিটার হাসের বক্তব্য পরোক্ষাভাবে গণমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনার বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন গণমাধ্যমের যে নীতি, তার বরখেলাপ।

বুলবুল আরও বলেন, পেশার সম্মান রক্ষায় আমাদের কাজ করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বছরে ২৭ হাজার ভিসা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে ১০ হাজার ভিসা পায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। তাদের তো ভিসানীতি রয়েছেই, আবার নতুন করে আবার যে ভিসানীতি, তা আমাদের ভয় প্রদর্শন করার জন্যই। আমরা কোনোভাবেই আমাদের ওপর চোখ রাঙানি বরদাশত করবো না।’

তিনি বলেন, ভিসানীতি দিল যুক্তরাষ্ট্র। আর তার তালিকা তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধপ্রশিক্ষক। আমার উদ্বেগ হলো গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতির প্রয়োগ বিষয়ে। সাংবাদিকদের শত্রু হলো দুটি, একটি ভয় ও অন্যটি লোভ। প্রকৃত ভদ্র সাংবাদিকরা কখনও এসব রক্তচক্ষুকে ভয় করে না।

ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম বলেন, আমার দেশ আমার। তুমি মার্কিনি কথা বলার কে? অন্য নেতারা বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কীভাবে কলুষিত করা যায়, সেই চেষ্টা করছে। রাজাকারের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র। ভিসানীতি দিয়ে আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। বাঙালি জাতিকে ভয় দেখানো সহজ নয়। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বাঙালি জাতিকে বাঁচাতে হলে। গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

ডিইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মানিক লাল ঘোষ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনোদিনই বাংলাদেশের বন্ধু ছিল না। মহান  মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবস্থান আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। ভিসানীতির নামে গণমাধ্যমের ওপর চাপ প্রয়োগ এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তমনা মানুষ উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানকেই জানান দিচ্ছে। তাদের এই নীতি   সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদকে উৎসাহিত করবে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে তাদের এই হস্তক্ষেপ গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে নষ্ট করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র।

জাস্টিস ফর জার্নালিস্টসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দ্য ডেইলি স্টেটের জয়েন্ট এডিটর ওবায়দুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সমাবেশে বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভুঁইয়া, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম। এম শাহজাহান সাজুর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তৃতা করেন জাস্টিস ফর জার্নালিস্টসের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাস্টিস ফর জার্নালিস্টসের মহাসচিব শাহীন বাবু, সাংবাদিক নেতা লায়েক উজ্জমান, সিনিয়র সাংবাদিক আজমল হক হেলাল, আবু সাঈদ, সোহেল আমহেদ সোহেল, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোশিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক, আল মাসুদ নয়ন, গোলাম মুজতবা ধ্রুব প্রমুখ।