ঢাকা,  শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ,

বিপুল ভোটে ফের ময়মনসিংহ সিটির মেয়র হলেন টিটু

বিপুল ভোটে ফের ময়মনসিংহ সিটির মেয়র হলেন টিটু

ছবি : সংগৃহীত

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আবারও ইকরামুল হক টিটুর ওপরই আস্থা রাখলেন নগরবাসী। বিগত দিনের কাজের মূল্যায়ন করে নগরবাসী তাদের সেবা এবং নগরীকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার জন্য মেয়র হিসেবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আবারও তাকে নির্বাচিত করেছেন। টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ইকরামুল হক টিটু ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬০৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ।

শনিবার (৯ মার্চ) রাত পৌনে ১১টার দিকে নগরীর টাউন হলের অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী বেসরকারিভাবে তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। এতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো জয়ের মুকুট পরলেন টিটু। 

নগরীর ৩৩টির ওয়ার্ডে ১২৮টি কেন্দ্রের ঘোষিত ফল অনুযায়ী টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ইকরামুল হক টিটু পেয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬০৪ ভোট। তার বিপরীতে হাতি প্রতীকের প্রার্থী সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু ৩৫ হাজার ৭৬৩ ভোট, ঘোড়া প্রতীকে এহতেশামুল আলম ১০ হাজার ৭৭৩, হরিণ প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল হক পেয়েছেন ১ হাজার ১৪৮৭ ভোট এবং লাঙ্গল প্রতীকে শহীদুল ইসলাম স্বপন ১ হাজার ৩২১ ভোট পেয়েছেন। 

এর আগে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে ১২৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়। ভোটাররা তাদের নগরপিতা ও কাউন্সিলর প্রার্থীকে বেছে নিতে ভোট দেন। দেশের দ্বাদশ সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয়বারের মতো এই নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শুরুর দিকে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটারের সংখ্যা। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। নগরীর কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভোটারসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছো। তাদের উপস্থিতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করেছে। মূলত মেয়র পদে নির্বাচন ঘিরেই তাদের মাঝে বাড়তি উৎসাহ যোগ করছে।

নগরজুড়ে আনন্দ মিছিল

কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল করেছেন নবনির্বাচিত মেয়র ইকরামুল ইক টিটুর কর্মী ও সমর্থকরা। এতে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে প্রতিটি এলাকা। ক্রমেই মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় ময়মনসিংহ।  
দেলোয়ার হোসেন নামে এক কর্মী বলেন, কোনো প্রার্থীই ইকরামুল হক টিটুর ভোটের ধারের কাছেও নেই। মেয়র পদে টিটুর জনপ্রিয়তার আবারও প্রমাণ দিয়েছেন ভোটাররা।

ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি শংকর সাহা বলেন, নগরের মানুষ একজন পরীক্ষিত বন্ধুকে বেছে নিয়েছে। তাই ইকরামুল হক টিটু বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করে আবারও মেয়রের মুকুট মাথায় পরতে পেরেছেন। 

এবার ৩৩টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন ১১১ জন। একটি ওয়ার্ডে একজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়েছেন ৬৯ জন প্রার্থী। সিটিতে মোট ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন। 

২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহকে সিটি করপোরেশন ঘোষণার গেজেট হয়। পরের বছর ৫ মে ভোটগ্রণণে দিন নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। যদিও সিটির প্রথম ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন ইকরামুল হক টিটু। 

যে কারণে অপ্রতিদ্বন্দ্বী টিটু 

ময়মনসিংহ নগরীর উন্নয়নের রূপকার হিসেবে পরিচিত ইকরামুল হক টিটু। মেয়র নির্বাচিত হয়ে গত ৫ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করেছেন। প্রায় ২ বছর আগে ময়মনসিংহ নগরীর উন্নয়নের জন্য সরকার ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। প্রাণঘাতী করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধকল কাটিয়ে নানামুখী কঠিন চ্যালেঞ্জ জয় করে প্রায় ৩২৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেন টিটু। এর মধ্যে ১০৫ কিলোমিটার আরসিসি, বিসি ও সিসি সড়ক, ৫০ কিলোমিটার ড্রেন ও ৩ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছেন। চলমান রেখেছেন ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার ৩৪৮ কিলোমিটার আরসিসি, বিসি ও সিসি সড়ক, ২৪২ কিলোমিটার ড্রেন ও ১০ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ।

সূত্র মতে, প্রকল্পগুলো পুরোদমে বাস্তবায়িত হলে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। স্মার্ট ময়মনসিংহ নগরী বিনির্মাণে প্রকল্পগুলো মাইলফলক হয়ে থাকবে। বিশেষ করে নগরীর নতুন যুক্ত ২২ থেকে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাসমূহে প্রশস্ত সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই পাল্টে দিয়েছে নাগরিকদের জীবনমান। দখলমুক্ত করে সচল করা হয়েছে ৫টি খালের পানি প্রবাহ।

জানা যায়, নগরীর বিভিন্ন এলাকা আলোকিত করতে ১৭১ কিলোমিটার সড়কে স্থাপন করা হয়েছে জিআই পোলসহ ৬৮৯০টি দৃষ্টিনন্দন সড়ক বাতি। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সোলার প্যানেলসহ স্থাপন করা হয়েছে ৩৫৮টি সড়ক বাতি। নয়নাভিরাম জয়নুল উদ্যানে লাগানো হয়েছে ২৭০টি গার্ডেন লাইট। নগরীর আরও কয়েকটি এলাকা আলোকিত করার জন্য প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য বাঘমারায় নগর মাতৃসদন ও গুলকীবাড়িতে নির্মাণ করা হচ্ছে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র। নাগরিকদের সেবা দিতে চলমান রয়েছে একটি নগর মাতৃসদন ও তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিশালতা ভোটের মাঠে টিটুর জয়ে বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।