ঢাকা,  শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ,

বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি

বিচার বিভাগ আস্থা হারালে জাতিকে খারাপ দিনের অপেক্ষা করতে হবে

আইন-আদালত

প্রকাশিত: ১৬:০০, ৩১ আগস্ট ২০২৩

সর্বশেষ

বিচার বিভাগ আস্থা হারালে জাতিকে খারাপ দিনের অপেক্ষা করতে হবে

বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, বিচার বিভাগকে মজবুত দেওয়াল দিয়ে রক্ষা করার দায়িত্ব বিচারকদের, আইনজীবীদের এবং রাষ্ট্রের প্রত্যেক দায়িত্বশীল নাগরিকের। বিচার বিভাগ আইন প্রয়োগে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র-নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিচার বিভাগ আস্থা হারালে জাতিকে খারাপ দিনের অপেক্ষা করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবসে বিদায়ী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী অবসরে যাচ্ছেন আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সে সময় সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় নিয়ম অনুসারে এদিন তাকে আপিল বিভাগের এক নম্বর এজলাস কক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বিদায়ী সংবর্ধনা দেন। পরে প্রধান বিচারপতি তার বিদায়ী বক্তব্য রাখেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগ প্রজাতন্ত্রের হৃৎপিণ্ড। রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের দক্ষতার চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের আর কোনও উপযুক্ত পরীক্ষা নেই। একটি জাতির জনগণ শাসন বিভাগ বা আইন বিভাগের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে, কিন্তু বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে সে জাতিকে খারাপ দিনটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আইনের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বা প্রাধান্য কার্যকর করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের।

 

তিনি বলেন, বিচার বিভাগ যদি আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ বা পিছপা হয়, তাহলে রাষ্ট্র ও নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। বিচার বিভাগ সংবিধানের আধিপত্য রক্ষার পাশাপাশি জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষক। সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের বিকাশ, আইনের শাসন সংরক্ষণ এবং সমাজের দুর্বল অংশের অধিকার এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য।

বিচার বিভাগকে রক্ষা করার বিষয়ে বিদায়ী প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বিচার প্রশাসনের সর্বোচ্চ আদালত আর বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সর্বোচ্চ স্তরের ওপর নির্ভর করে। সাংবিধানিক বিধান দিয়ে সর্ব প্রকার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে বিচার বিভাগকে মজবুত দেওয়াল দিয়ে রক্ষা করার দায়িত্ব বিচারকদের, আইনজীবীদের এবং রাষ্ট্রের প্রত্যেক দায়িত্বশীল নাগরিকের। আমরা, আপনারা, সবাই সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সর্বনাশা দিনের জন্য প্রত্যেক নাগরিকের অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক বিভক্তি রাজপথ অতিক্রম করে বিচারালয় অভিমুখে ধাবিত হলে সেটা বিচারলয়ের জন্য মঙ্গলজনক হয় না। আমাদের মনে রাখতে হবে, আইনজীবীদের বিভক্তি ও মতভেদ এবং তার প্রতিক্রিয়া বিচারালয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। রাজনৈতিক মতাদর্শ রাজনৈতিকভাবে বাস্তবায়ন করলে এবং বিচারালয়কে নিরাপদ দূরত্বে রাখলে বিচার বিভাগ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। যে মহান চিন্তা ও কল্যাণ চেতনাকে সন্নিবেশিত করে আমাদের সংবিধান প্রণিত হয়েছে, তার ধারক-বাহক হিসেবে, দেশের সব আইন ও সব আইনি কার্যক্রম সাংবিধানিক চেতনার প্রতিফলন নিশ্চিত করার সুমহান জাতীয় দায়িত্ব আমাদের সবার। মানুষ চায় শান্তি আর শান্তি কিন্তু পরিপূর্ণ শান্তির জন্য আমাদের এখনও অনেকটাই এগোতে হবে। আমাদের আঁকাবাঁকা জায়গাগুলোকে সোজা করতে হবে।

তিনি বলেন, সংবিধানপ্রণেতারা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করেছেন, সে স্বাধীনতা কার্যকর করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গের এবং প্রত্যেক নাগরিকের। সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ’৭১-এর রক্ত বৃথা যাবে। মনে রাখতে হবে জনগণের ঐক্যবদ্ধ বীরত্ব ও সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই দেশ, এই বিচারালয়কে পেয়েছি। ’৭১-এ জাতি চরম ত্যাগ স্বীকার করে স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছে। আমাদের জাতীয় দায়িত্ব হলো সর্বক্ষেত্রে সেই দেশকে এগিয়ে নেওয়া। আমরা ব্যর্থ হলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। আমাদের প্রতিটি আইনে মানবিকতার স্পর্শ থাকতে হবে। আইন যদি দরিদ্রকে পিষে দেয় আর ধনী ব্যক্তি যদি আইনকে পিষে দেয়, তাহলে রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগ সঠিকভাবে চলছে, এটা কোনোভাবেই বলা যাবে না।

শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য শক্তিশালী ও স্বাধীন বিচার বিভাগ অপরিহার্য মনে করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা আর বিচারকদের রাজনৈতিকভাবে বয়ে যাওয়া হাওয়া থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে, সংবিধান, আইন নিজেদের বিচারিক বিবেকের প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত থেকে বিচার কার্য সমাধান করা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় জনগণের অগাধ আস্থা স্থাপন করতে হবে এবং থাকতে হবে নইলে জনগণের অধিকার রক্ষা হবে না এবং স্বাধীনতাও বিপন্ন হবে। সব বিচারককে অসামান্য নৈতিকতার অধিকারী হতে হবে, নইলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা শুধু সংবিধানের ভেতরই আবদ্ধ থাকবে। ধন্য তারাই, যারা অন্তরে শুদ্ধ।

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আমাদের সংবিধান ৩০ লাখ শহিদের রক্তে রঞ্জিত এবং প্রত্যেক দেশবাসীর ওপর পবিত্রভাবে বাধ্যতামূলক, যেখানে রাষ্ট্রে বিভিন্ন অঙ্গের এখতিয়ার এবং ক্ষমতা, সঠিক আইন প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের পবিত্র দায়িত্ব হলো এর প্রতিটি অক্ষরের প্রতি অনুগত থাকা এবং সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া। সবার ভেতর এমন একটা ভিত তৈরি করতে হবে, যেন প্রত্যেক নাগরিক আমাদের এই দেশটাকে প্রচণ্ড রকম ভালোবাসে এবং ’৭১-এর রক্তকে মূল্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে এবং অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করতে কঠোর পরিশ্রম করে।

জুডিসিয়ারি প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, জুডিসিয়ারিকে পরিবর্তন করার জন্য জনসাধারণের চাহিদা এবং তাদের ক্রমবর্ধমান অনুভূতি এবং সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টার আকাঙ্ক্ষা কাজ করেছে আমার নিজের ভেতর। হয়তো আমি নাড়া দিতে পেরেছি মাত্র। আমার পদক্ষেপগুলো তাদের সমাধানের পথের নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে কিন্তু সম্পূর্ণ সমাধান রাতারাতি সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার নিয়ামক শক্তিগুলোর একই মনমানসিকতা, সমন্বিত উদ্যোগ, প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান আর সমাজব্যবস্থা, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও পদক্ষেপ।

আমি সব সময় মনে করেছি আমি বাংলার, বাংলা আমার এবং আমি মুসলিম, আমি বাঙালি আর ’৭১ আমার প্রেরণা। আমি চেষ্টা করেছি জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাকে আমার কাজের মধ্যে প্রতিফলন ঘটাতে, বলেন তিনি।

জুডিসিয়ারিকে সুশৃঙ্খল ও গতিশীল করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের বিচার বিভাগ পৃথিবীতে শক্তিশালী বিচার বিভাগগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশকে বসবাসের জন্য আরও ভালো জায়গা করার লক্ষ্যে জনগণ যাতে স্বল্প খরচে স্বল্প সময়ে ন্যায় বিচার পায়, তার জন্য আমার বিচারকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি বিচারপ্রার্থী অভাগা মানুষগুলো আদালত প্রাঙ্গণে এসে একটু স্বস্তিতে বসতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে। বিচারকদের বোঝাতে চেষ্টা করেছি সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা মানুষের বিচারিক সেবা দেওয়ার জন্যই বিচারকের দায়িত্ব দিয়েছেন। রাষ্ট্রে আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও ন্যায়কুঞ্জের জন্য, রেকর্ড ভবনের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমার চমৎকার শেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। শিখেছি বিজ্ঞ আইনজীবীদের আলোচনা, যুক্তি, আইনি ব্যাখ্যা, ঘটনার বিশ্লেষণ করার কৌশল থেকে। চেষ্টা করেছি আপনাদের শুনে-বুঝে, বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার। আমি প্রতিটি স্তরে বারের কাছে ঋণী। বার হলো বিচারকদের বিচারক। আমি সব সময় তেমনটিই ভেবেছি। আমি চেষ্টা করেছি ধৈর্য্য সহকারে শোনার, যত্ন সহকারে বিবেচনা করার, সঠিকভাবে বোঝার এবং ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত দেওয়ার। একজন রাজনীতিবিদ পরবর্তী নির্বাচনের কথা ভাবেন, একজন রাষ্ট্রনায়ক পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভাবেন আর একজন বিচারককে ভাবতে হবে সংবিধান ও আইনানুযায়ী ন্যায় বিচার করার কথা।

জুনিয়র আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মতো পরিশ্রমী ও শক্তিশালী হও কিন্তু ভদ্রতাকে বিসর্জন দিয়ে নয়, দয়ালু হও কিন্তু দুর্বল নয়, সাহসী হও কিন্তু আদালতকে ধমকাবে না, চিন্তাশীল হও কিন্তু অলস হয়ো না, নম্র হও কিন্তু ভীরু হোয়ো না, গর্বিত হও কিন্তু অহংকারী নয়, হাস্যরসিক হও কিন্তু মূর্খতা ছাড়া। সৎ থাকো, পরিশ্রম করো, একদিন দেখবে অনেক বড় আইনজীবী হয়ে গিয়েছ। মহাকাশের মতো উদার হও, যেখানে কোনও জাতীয় সংঘাত নেই।

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আমার মনে হয় আমার উত্তরাধিকারীরা গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন এবং আমি এটাও মনে করি মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার অধিকারী করবেন এবং বিচার বিভাগকে আরও গতিশীল বিচার বিভাগে পরিণত করবেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমি আমার বিচার বিভাগ তার কাছেই হস্তান্তর করতে যাচ্ছি, যিনি এই বিভাগকে আরও গতিশীল করার জন্য ক্ষমতাবান এবং মনোযোগী হবেন। আমি অপেক্ষা করব আপনাদের ভবিষ্যতের সাফল্যের গল্প শোনার জন্য। এখানে আমার ৪৩ বছরের পদচারণা আজ থেকে স্মৃতি হয়ে থাকবে।

 

তিনি বলেন, আমি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মহাশক্তিতে বিশ্বাস করি, তিনি এই পবিত্র বিচারালয়, বিজ্ঞ বিচারকরা, বিজ্ঞ আইনজীবীরা, বিচারালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রক্ষা ও সঠিক পথে চলার তওফিক দান করবেন। আমার কর্মকালীন সম্মানিত বিচারকরা, বিজ্ঞ আইনজীবীবৃন্দ, আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, অর্থ, জনপ্রশাসন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ এবং সুপ্রিম কোর্ট রেজিষ্ট্রির প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাংবাদিক ভাই-বোনেরা যে সহায়তা দিয়েছেন তা আমি কৃতজ্ঞতার সাথে সারাজীবন মনে রাখবো।

আরও বলেন, এই বিদায় মুহূর্তে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমার মরহুম বাবা-মাকে। আমার জন্য এবং আমাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য অপরিসীম কষ্ট আর ত্যাগ স্বীকার করে তারা জান্নাতবাসী হয়েছেন। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত প্রার্থনা করছি রব্বুল আলামীনের দরবারে। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার স্ত্রী, কন্যাদের প্রতি এবং ভাইবোন ও ভগ্নিপতিদের প্রতি, তারা আমার সংগ্রামের পথে সহায়তা করেছেন।

বক্তব্যের শেষ অংশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা আবার দেখা করবো, কোথায় জানি না, কখন জানি না, তবে জানি আমাদের আবার দেখা হবে কোনো এক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে। আমি বিচার বিভাগকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম এবং আমি চেষ্টা করেছি স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে। আমি সারা দেশে বিচারকদের কর্মতৎপরতা দেখে মামলাজট মুক্তির আসন্ন বিজয়ের স্বপ্ন দেখি। বিজয়ী হওয়ার রাস্তা যতই দীর্ঘ হয় না কেন, বিজয় ছাড়া বাঁচা যায় না। সারা দেশের বিচারকরা মামলাজট সংগ্রামে বিজয়ী হবেন ইনশা আল্লাহ। মহান আল্লাহ তায়ালা আপনাদের সাহায্য করুন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়